সে পারলৌকিক কাজ বা উপনয়নই হোক—কোনও কাজের জন্য কেউ ঘাটে এলেই হল! সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে নিয়ে রীতিমতো টানাটানি পড়ে যায়। কে কম টাকায় কাজ করে দেবে, তা নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়েই দরাদরি চলে। কারণ, পুরোহিতদের মধ্যেও যে ‘সিন্ডিকেট’ রয়েছে! আর সেই ‘সিন্ডিকেটে’র একাংশের বিরুদ্ধেই এবার গঙ্গা নোংরা করার অভিযোগ উঠল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, ‘সিন্ডিকেটে’র দাপটে বাগবাজারের গঙ্গাতীর জুড়ে যেখানে-সেখানে কাকের পিণ্ড, পুজোর ফুলমালা-সহ নানা জিনিসপত্র পড়ে থাকছে। ফলে গঙ্গার পাড় ভরে যাচ্ছে আবর্জনায়। স্থানীয় এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘যে সকল পুরোহিত রাস্তায় আলাদা আলাদা বসে কাজ করেন, তাঁদেরই কয়েকজন গঙ্গাতীর অপরিষ্কার করে রাখেন।’’ আর ওই অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করেছেন স্থানীয় কাউন্সিলর। মৌখিক নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছে যে, ‘গঙ্গা নোংরা করলে সংশ্লিষ্ট পুরোহিতকে আর কাজ করতে দেওয়া হবে না!’
এ বিষয়ে কাউন্সিলর বাপি ঘোষ বলেন, ‘‘অনেক পুরোহিতই গঙ্গা অপরিষ্কার করছেন। অভিযোগ পাওয়ার পরেই বিষয়টি নিয়ে পুরোহিতদের সঙ্গে বৈঠকে বসি। তাঁদের স্পষ্ট বলে দিয়েছি যে, গঙ্গা নোংরা করলে কাজ করতে দেওয়া হবে না।’’
প্রসঙ্গত, শ্রাদ্ধশান্তি, পারলৌকিক কাজ থেকে শুরু করে উপনয়ন, নামকরণ-সহ যে কোনও ধর্মীয় কাজের জন্য প্রতিদিনই বাগবাজারের ঘাটে অসংখ্য মানুষ যান। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানাচ্ছেন, তাঁদের নিয়ে রীতিমতো ‘টানাটানি’ পড়ে যায় ঘাটের পুরোহিতদের একাংশের মধ্যে। এমনিতে ওই ঘাটে ভিন রাজ্যের পুরোহিত থেকে বাঙালি পুরোহিত, সকলেই রয়েছেন। ফলে তাঁদের মধ্যে ‘প্রতিযোগিতা’ও প্রবল বলে জানাচ্ছেন বাসিন্দারা। তবে ওই ঘাটের এক পুরোহিতের কথায়, ‘‘একে ঠিক প্রতিযোগিতা বলা যাবে না। তবে সকলেই তো কাজ করতে চান। তাই হয়তো ব্যাপারটা এরকম মনে হচ্ছে।’’
তবে শুধু কাউন্সিলরই নন, বিষয়টি নিয়ে এগিয়ে এসেছে ‘বাগবাজার গঙ্গাতীর ভাগবত সভা’ও। ঘাট পরিষ্কারের জন্য পুরোহিতদের কাছে আবেদনও করেছে ওই সভা। সভার সম্পাদক গঙ্গাধর সখা বলেন, ‘‘অনেক পুরোহিতই গঙ্গাতীরের যেখানে-সেখানে পারলৌকিক ক্রিয়া, উপনয়নের কাজ করছেন। ফলে গঙ্গা অপরিষ্কার হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পুরোহিতদের আমরা সচেতনও করেছি। প্রয়োজনে আবারও কথা বলব।’’ সভার প্রধান পুরোহিত তুলসী দাস মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘গঙ্গা পরিষ্কার রাখার জন্য পুরোহিতেরা সকলে মিলে কাজ করবেন এটাই কাম্য।’’