হোম-যজ্ঞ ফুল-ফল মন্ত্র উচ্চারণ— রীতিমতো ধুতি আর গলায় নামাবলি চড়িয়ে শ্রাদ্ধে মন্ত্রোচ্চারণ করতে দেখা গেল এক তৃণমূল কাউন্সিলরকে। শ্রাদ্ধকার্যের পর নরনারায়ণ সেবাও হয়। খিচুড়ি, সবজি, চাটনি খেলেন হাজারও নিমন্ত্রিত। শ্রাদ্ধশান্তির পরে সন্ধ্যায় মন্দিরে ‘শিবকথা’ গাইলেন স্থানীয় মহিলারা।
ভাবছেন কাউন্সিলরের আত্মীয় বা পিতৃপরুষের শ্রাদ্ধের আয়োজন? একেবারেই না! ভোলা নামক ষাঁড়ের অন্ত্যেষ্টির সাক্ষী থাকলেন আসানসোলের বাসিন্দারা।
কথায় আছে, অর্থ থাকলে ভূতের বাপেরও শ্রাদ্ধ হয়। কিন্তু, আসানসোল পুরনিগমের ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কল্যাণ দাশগুপ্তকে দেখা গেল ঘটা করে ষাঁড়ের শ্রাদ্ধ করতে। শাস্ত্রমতে শ্রাদ্ধে ব্রাহ্মণকে ষাঁড় উৎসর্গের রেওয়াজ রয়েছে। কিন্তু মাহখরচের সেই বৃষোৎসর্গ আজ নেহাতই গল্পকথা। সেই শ্রাদ্ধে উৎসর্গীকৃত ষণ্ডকুল আক্ষরিক অর্থেই ‘ধর্মের ষাঁড়’ হয়ে চরে বেড়াত। আসানসোলের ভোলাও সেই ষণ্ডকুলের বংশধর বলে জানা যায়। সেই ষাঁড়েরই শ্রাদ্ধ হল আসানসোলের রাধানগর রোড নিচুপাড়া এলাকায়।
কেউ বলতেন ভোলা কেউ বা নন্দী। স্বয়ং শিবের বাহন। গত দশ বছর ধরে এলাকার মানুষের কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছিল ভোলা। কয়েকদিন আগেই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ভোলার। এলাকার মানুষ কম কসরত করেননি ভোলাকে বাঁচানোর। কিন্তু, শেষরক্ষা হয়নি।
শিবরাত্রির কাছাকাছি সময়ে ভোলার মৃত্যুতে মন খারাপ হয়ে যায় সবার। বাড়ির দরজায় দরজায় আদায় সে করত আলু-সবজি-ভাত। স্থানীয়দের দাবি, কারও অনিষ্ট করত না সে।
পুরোহিতের নিদান মেনেই ভোলার শ্রাদ্ধশান্তি করা হয় নীচুপাড়ায়। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর কল্যাণ দাশগুপ্তর উদ্যোগেই হয় শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান। পুরোহিতের সঙ্গে ‘ব্রতী’ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন কল্যাণবাবু। এই ঘটনায় অবশ্য রাজনীতির রং লাগে আসানসোলে। কেউ কেউ কটাক্ষ করেছেন, বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কে থাবা বসাতেই ষাঁড়ের শ্রাদ্ধ করতে হচ্ছে শাসক দলকে।