বিধানসভা কেন্দ্রে দলের পরাজয় নিয়ে দলীয় নেতৃত্বকে দায়ী করলেন অঞ্চল সভাপতিরা। সেই সঙ্গে ভোটারদের ‘বেইমান’ বললেন কেউ কেউ। আর এ সবই হলো বীরভূমে তৃণমূলের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা অনুব্রত মণ্ডলের সামনে। যদিও অনুব্রতর দাবি, আগামী লোকসভা নির্বাচনে ২৫ হাজার ভোটে লিড দিতে হবে রামপুরহাট ২ নম্বর ব্লক এলাকা থেকে।
লোকসভা ভোটের আগে বীরভূম জেলার ১৯টি ব্লকে কর্মিসভা করছে তৃণমূল। প্রতিটি সভায় শিক্ষকের মতো অঞ্চল সভাপতিদের ডেকে দলের অবস্থান নিয়ে রিপোর্ট নিচ্ছেন অনুব্রত মণ্ডল। সেই মতো শনিবার বিকেলে তারাপীঠের তারা উদ্যানে রামপুরহাট ২ নম্বর ব্লকের সভা ডাকা হয়েছিল। জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল-সহ সেখানে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, মৎস্যমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরী, দলের জেলা সহ সভাপতি রানা সিংহ।
সভায় রিপোর্ট পেশ করার জন্য প্রথমেই ডাকা হয় দুনিগ্রাম অঞ্চল সভাপতি মহম্মদ মোবিনকে। ওই অঞ্চলে গত বিধানসভা নির্বাচনে ২৮৭৮ ভোটে পিছিয়ে ছিল দল। কেন তৃণমূল পিছিয়ে ছিল তাঁর কাছে জানতে চানঅনুব্রত। উত্তরে মোবিন বলেন, “মানুষ আমাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু ভোট দেয়নি। তা ছাড়া বিরোধী জোটের জন্য ফল খারাপ হয়েছে। তবে লোকসভা নির্বাচনে বিরোধীরা একশো ভোটও পাবে না। আমরা তিন হাজার ভোটে এগিয়ে থাকব।’’
এর পরেই হাঁসন ১ অঞ্চল সভাপতি কুদ্দুস আলিকে ডেকে জানতে চাওয়া হয় কেন ১৫৬৮ ভোটে পরাজয় হয়েছিল? গুরুগম্ভীর স্বরে অনুব্রত প্রশ্ন করেন, ‘‘কেন হারলাম?’’ উত্তরে উপস্থিত সবাইকে চমকে দিয়ে তিনি বলেন, “নেতৃত্বের ব্যর্থতার জন্য পরাজয় হয়েছে। তা ছাড়া সব পঞ্চায়েতে আমরা ক্ষমতায় ছিলাম না।’’ মুখের উপরে এমন জবাব পেয়ে স্বভাবতই ওই অঞ্চল সভাপতিকে পাল্টা প্রশ্ন করেন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল। পাল্টা তিনি বলেন, ‘‘এত কাজ করার পরেও ব্যর্থতা, তাকিয়ে দেখার মতো উন্নয়ন, তার পরেও ব্যর্থতা? এটা আমাদের মানতে হবে?’’ দৃশ্যতই অস্বস্তিতে পড়া অনুব্রত ওই নেতাকে আরও জিজ্ঞেস করেন, ‘‘বলুন কার ব্যর্থতা, আপনার দোষ না ব্লক প্রেসিডেন্টের দোষ, নাকি যাঁকে প্রার্থী করা হয়েছিল তাঁর দোষ?’’
অনুব্রতর সামনেই নেতৃত্বের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হওয়ায় সভার মধ্যেই রীতিমতো ফিসফাস শুরু হয়ে যায়। যদিও অভিযোগকারী নেতা এর পরে আর বেশি কথা বাড়াননি।
ব্যর্থতার কারণ হিসেবে হাঁসন ২ অঞ্চল সভাপতি টোকন সরকার বলেন, “ওই এলাকায় কংগ্রেস বিধায়ক মিল্টন রসিদের শ্বশুরবাড়ি। তাই আমরা ওই এলাকায় পরাজিত হয়েছি।’’ বাকিরা তাও উত্তর দিয়েছেন। কিন্তু ওই অঞ্চলের খেদাপাড়া বুথের কর্মী রাধারানি দাসী অনুব্রত মণ্ডলের প্রশ্ন শুনে ভয়ে চেয়ারেই বসে থাকেন। যা দেখে লুকিয়ে হেসে ফেলেন দলেরই অনেক নেতা, কর্মী।
দেখুন ভিডিও
গত বিধানসভা ভোটে হাঁসন কেন্দ্রে পরাজিত হন তৃণমূল প্রার্থী অসিত মাল। তাঁকে হারিয়ে দেন কংগ্রেসের জোট প্রার্থী মিল্টন রসিদ। সভার মধ্যেই অনুব্রত প্রশ্ন করেন, “এক সময়ে তো মাড়গ্রাম অসিত মালের ঘাঁটি ছিল। তবু এত দুর্দশা কেন?’’ এ প্রশ্নেরও কোনও উত্তর মেলেনি।
ব্লক স্তরের নেতাদের সঙ্গে বিধানসভা ভোটে হারের ময়নাতদন্তের পরে সব শেষে সাংবাদিকদের অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “লোকসভা নির্বাচনে আমরা এই ব্লকে ২৫ হাজার ভোটে এগিয়ে থাকব। ভোট মানেই অঙ্ক, কৌশল, উৎসব। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উন্নয়ন করেছেন। এ বার ভোটে বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকরাও উন্নয়ন দেখতে পাবেন।’’