হোমে সাত পাতাওয়ালা দুর্বা লাগে, অর্ঘ্যে তিনটি পাতা-সহ দুর্বা। বেলপাতা কী ভাবে ধুতে হবে, তুলসি পাতা কী ভাবে বাছতে হবে, আরতির সঠিক পদ্ধতি কী, কালীপুজো করতে আসা আপনার বাড়ি বা পাড়ার পুজোর পুরোহিত মশাই কি পুজোর এই সঠিক পদ্ধতিগুলি জানেন?
মা কালীর আশীর্বাদ যেমন সুসময় নিয়ে আসতে পারে, দেবীর পুজোয় কোনও ভুল বা খুঁত থাকলে তার ফলও কিন্তু হতে পারে মারাত্মক। ক্ষতি হতে পারে খোদ যজমানেরই। শাস্ত্রেই সেকথা লেখা রয়েছে। খোদ পুরোহিতরাই একথা স্বীকার করে নিচ্ছেন।
দুর্গা পুজোর জন্য প্রতি বছরই পুরোহিতদের প্রশিক্ষণ হয় কলকাতায়। কিন্তু কালীপুজো হাতে কলমে শেখার সেরকম কোনও সুযোগ নেই। অথচ শুধু দীপান্বিতা অমাবস্যা ছাড়াও বছরভর গোটা বাংলাতেই প্রতি অমাবস্যায় নয়তো মানসিক করা কালীপুজো হয়। পুরোহিতদের একাংশই বলছেন, উপযুক্ত প্রশিক্ষণের অভাবে অনেক সময়ই পুজোতে ত্রুটি থেকে যাচ্ছে।
কালীপুজোর জন্য পুরোহিতদের উপযুক্ত করে তুলতেই পুরোহিতদের জন্য প্রথম বার প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করেছিল সর্বভারতীয় ব্রাহ্মণ পরিষদ। বেলুড়ে ‘সংস্কৃত সংস্কৃতি’ নামে একটি সংগঠনের দফতরে গত ৩০ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ শিবির করা হয়। সেখানে পুরোহিতদের জন্য রীতিমতো ‘থিওরিটিক্যাল এবং প্র্যাক্টিক্যাল’ ক্লাসের বন্দোবস্ত ছিল বলেই দাবি করেছেন উদ্যোক্তারা।
কালীপুজো শিখতে পুরোহিতদের ভিড়। নিজস্ব চিত্র
কী শেখানো হয়েছে পুরোহিতদের? সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন পাঠক জানালেন, পঞ্চশুদ্ধি, আচমন, ন্যাস, প্রাণ প্রতিষ্ঠার মতো পুজোর প্রাথমিক পাঠ শেখানো হয়েছে পুরোহিতদের। এছাড়াও পুজোর উপচার নিবেদন করার পদ্ধতি, বলিদান, হোম ইত্যাদির প্রক্রিয়া হাতেকলমে শিখেছেন প্রায় চল্লিশজন পুরোহিত। কালীপুজোর প্রাসঙ্গিকতা কোথায়, মা কালীর গলায় কেন মুণ্ডমালা রয়েছে, এই সমস্ত বিষয়ে তাত্ত্বিক আলোচনা করা হয়েছে। দু’টি সংস্কৃত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা সেখান উপস্থিত ছিলেন।
কালীপুজো নিয়ে তাত্ত্বিক আলোচনাও করা হয়
প্রশিক্ষণ শিবিরে। নিজস্ব চিত্র
রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘শ্রুতিতে বলা আছে ভুল মন্ত্র পড়লে বজ্রপাতের মতোই যজমানের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। যজমানের অস্তিত্ব থাকলেই তো পুরোহিতের অস্তিত্ব থাকবে। তাঁদের ক্ষতি হলে আখেরে আমাদেরই ক্ষতি। তাই পুজোর সঠিক পদ্ধতি জানা অত্যন্ত জরুরি। পুজো নিয়ে এত বাণিজ্যিকরণ হচ্ছে, মানুষের আনন্দ হচ্ছে, অথচ পুজো করার উপযুক্ত পুরোহিতই পাওয়া যাচ্ছে না।’’
ব্রাহ্মণদের এই সংগঠনের অভিযোগ, সরকারি উদাসীনতায় পুরোহিতদের প্রশিক্ষণের কোনও ব্যবস্থা নেই। ২০০৭ সাল থেকে সংস্কৃত কলেজে পৌরহিত্যের সরকারি কোর্সটিও বন্ধ। ফেল ইচ্ছে থাকলেও নতুন প্রজন্মের কেউ পুরোহিত হওয়ার উপযু্ক্ত প্রশিক্ষণ পাচ্ছেন না। সর্বভারতীয় ব্রাহ্মণ পরিষদের সদস্যদের দাবি, প্রশিক্ষণ শিবির ঘিরে বিপুল সাড়া পাওয়া গিয়েছে। তাই এবার থেকে প্রতি মাসেই বিভিন্ন পুজো, পারলৌকিক ক্রিয়া, অন্যান্য অনুষ্ঠানের জন্য পুরোহিতদের হাতেকলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে, যাতে পুরোহিতদের পরবর্তী প্রজন্মকে তৈরি করে নেওয়া যায়।