শরীরে বাসা বেঁধেছে মারন রোগ ক্যান্সার। দিন রাত ওষুধের সাহায্য ছাড়া চলাফেরাই দায় বছর একত্রিশের তরুণীর। দিনের বেশিরভাগ সময় বিছানায় শুয়ে বসে কাটাতে হয় তাঁকে। একদিকে যখন জীবনযুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন ওই তরুণী, ঠিক সেই সময়ে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের লোকেদেরকে লাগাতার হুমকির মুখে পরতে হচ্ছে। হুমকির জেরে পুরনো বাড়ি ছেড়ে নতুন বাড়িতে ভাড়া আসতে বাধ্য হয়েছেন ওই তরুণী ও তাঁর পরিবার। সোনারপুর থানার নেতাজী ব্লক এলাকার চক্রবর্তী পাড়ার ঘটনা। ইতিমধ্যেই সোনারপুর থানায় বিষয়টি জানালেও পুলিসি আশ্বাসেও নিশ্চিন্ত হতে পারছে না ওই পরিবার। সর্বদা চোখে মুখে আতঙ্ক লেগে রয়েছে তাঁদের।
কিন্তু কী কারণে এরকম হুমকি? ঘটনার সূত্রপাত গত বৃহস্পতিবার। প্রতিদিনের মতো সেদিন রাতেও বাথরুমে স্নান করছিলেন ওই তরুণী। হঠাৎ ছাদের উপরে কিছু পড়ার আওয়াজ পান তিনি। বাথরুমের উপরের দিকে চাইতেই দেখেন, মোবাইল ফোনে বাথরুমের চালের ফাঁক দিয়ে কেউ তাঁর স্নানের ছবি তুলছে মোবাইল ফোনে। কে কে বলে চিৎকার করতেই ওই তরুণীকে লক্ষ্য করে অ্যাসিড ছুড়ে পালিয়ে যায় ওই দুষ্কৃতী। অল্পের জন্য অ্যাসিডের হাত থেকে রক্ষা পান তরুণী। কিন্তু পালিয়ে যাওয়ার সময়ে অভিযুক্তের চেহারা পরিষ্কার চিনতে পারেন তিনি। ওই পাড়ারই বাবুসোনা হালদার নামে এক যুবক এই কাণ্ড ঘটায় বলে অভিযোগ। বাড়ির ছাদে জুতো ফেলে পালায় অভিযুক্ত। এমনকী, পালিয়ে যাওয়ার সময়ে স্থানীয় আরও একজন দেখতে পায় অভিযুক্তকে।
অভিযুক্ত বাবুসোনা হালদার। (ডানদিকে) তরুণীর বাড়ির দেওয়ালে অ্যাসিড হামলার চিহ্ন। নিজস্ব চিত্র
এই ঘটনার পরদিনই সোনারপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করে তরুণীর পরিবার। অভিযোগ পাওয়ার পরেই অবশ্য সোনারপুর থানার পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে ঘটনার তদন্ত শুরু করে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। বর্তমানে অভিযুক্ত বাবুসোনা হালদার ১৪ দিনের জেল হেফাজতে রয়েছে। অভিযোগ, গত রবিবার থেকেই বাবুসোনার পরিবারের লোকেরা বারে বারে ওই তরুণী এবং তাঁর বৃদ্ধ বাবা, মা-কে হুমকি দিচ্ছে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য। অভিযোগ না তুললে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হচ্ছে এই অসহায় পরিবারকে।
পালানোর সময় অভিযুক্তের ফেলে যাওয়া যুক্ত। নিজস্ব চিত্র
এর পরেই বাড়ি বদল করে অন্য একটি বাড়িতে চলে যায় তরুণীর পরিবার। তার পরেও অবশ্য হুমকি বন্ধ হয়নি বলেই দাবি ওই পরিবারের। ভয় না পেয়ে অবশ্য ওই তরুণী অভিযুক্তের যথাযথ শাস্তি চান। তিনি বলেন, ‘রাস্তা ঘাটে অনেক অ্যাসিড হামলার কথা শুনি, এখন তো দেখছি বাড়িতেও মেয়েরা নিরাপদ নয়। তার উপর এইভাবে বাথরুমের মধ্যে মহিলাদের স্নানের ছবি মোবাইলে তোলা হচ্ছে? সত্যি ভাবতে পারছি না। দোষীর এমন শাস্তি হোক, যাতে ভবিষ্যতে কেউ এমন ঘৃণ্য কাজ করতে সাহস না পায়।’
হেমিওপ্যাথি চিকিৎসা নিয়ে পঞ্জাবের ফরিদপুরে পড়াশোনা করতে গিয়েই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তরুণী। চিকিৎসার পরে জানতে পারেন, মারণ রোগ ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনি।