প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের বেঙ্গল কেমিক্যালস হোক অথবা হাওড়ার দাসনগর যাঁর নামে সেই আলামোহন দাসের ইন্ডিয়া মেশিনারি কোম্পানি অথবা স্যার বীরেন মুখোপাধ্যায়ের বার্ন স্ট্যান্ডার্ড— বাঙালি উদ্যোগপতিদের সংখ্যা কম নয়। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, গত দু’তিন দশকে নতুন বাঙালি শিল্পপতিদের সেভাবে দেখা যাচ্ছে না।
তার একটি কারণ অবশ্যই রাজনৈতিক। এখন পরিস্থিতি বেশ সঙ্গীন। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু উদ্যোগপতির দেখা মিললেও, বাঙালীর শিল্প-বিমুখতা নিয়ে সার্বিক ধারণাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। অথচ চারিদিকে এখন স্টার্ট-আপের ছড়াছড়ি। নবীন প্রজন্ম নতুন ছোট ছোট প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলছে, কোনও বিশেষ প্রোডাক্ট বা পরিষেবা নিয়ে একটি নির্দিষ্ট বাজার ধরার চেষ্টা করছে।
বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে, শিল্পক্ষেত্রে বাংলার এই নবীন প্রজন্মকে উৎসাহিত করার জন্য যদি তাদের কাছে আরও নবীন বয়সে পৌঁছে যাওয়া যায়, তাহলে কাজটি অনেক সহজ হয়।
দুই বঙ্গতনয়া স্মিতা ও দেবিকা মজুমদার ঠিক সেই কাজটিই করতে চাইছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমবিএ কোর্স করে সেদেশেই এক সহযোগীর সঙ্গে নিজের সংস্থা গড়েছিলেন স্মিতা। আর দেবিকাও একজন উদ্যোগপতি। বিদেশে তাঁর হাতে তৈরি সংস্থা নজর কেড়েছে। এবার দু’জনে মিলে কলকাতায় শুরু করেছেন তাঁদের নতুন উদ্যোগ ‘ইয়ংপ্রেনিয়রস’।
এঁদের উদ্দেশ্যই হল স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের কাছে উদ্যোগপতি হওয়ার রূপরেখা তুলে ধরা। স্মিতার কথায়, ‘আমরা চাইছি শিল্প-উদ্যোগ নিয়ে হাই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একটি ধারণা তৈরি করতে। এমন নয় যে, তারা পড়াশোনা ছেড়ে দেবে। কিন্তু পরবর্তীকালে তারা যখন কলেজে যাবে, তাদের এই শিক্ষা অনেক সমস্যা সমাধানে সাহায্য করবে।’
শিল্প-উদ্যোগ নিয়ে ধারণা তৈরি করতে শুধুই ক্লাসরুম শিক্ষা নয়, বিভিন্ন কর্মশালা ও ক্যাম্প, যোগ, মেডিটেশন, ট্রেজার হান্টের মতো খেলার সাহায্য নেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীদের কিছু ব্যবহারিক সমস্যা সমাধান করতে বলা হবে, যা তাদের নিজস্ব সমস্যা সমাধানেও সাহায্য করবে।
আপাতত কলকাতা থেকে শুরু হলেও ইয়ংপ্রেনিয়রস সারা দেশেই এই কোর্স চালু করতে চায়। পরবর্তীকালে জন হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের থেকেও এই কোর্সের স্বীকৃতি পাওয়া যেতে পারে বলে জানাচ্ছেন স্মিতা।