আপনার মা-ঠাকুমা হয়তো অনেকদিন ধরেই বলছেন, কোথাও একটু ঘুরিয়ে নিয়ে আসবি? পরিবারের বড়-ছোট সকলকে নিয়ে ঘুরে আসার মতো জায়গা বিষ্ণুপুর। মন্দিরের ছড়াছড়ি সেখানে। সেই সঙ্গে ইতিহাসের গন্ধমাখা। বাড়ির বয়স্করাও খুশি হবেন, আবার ছোটরাও এক্সপ্লোর করার সুযোগ পাবে, এমনই জায়গা বিষ্ণুপুর। দিন দুয়েকের ছুটিতে সদলবলে পাড়ি দিন বাঁকুড়া জেলায়।
বিষ্ণুপুরের টেরাকোটা মন্দিরের আরও ছবি দেখতে CLICK করুন
টেরাকোটার মন্দির দেখতে চলুন বিষ্ণুপুর
হস্তশিল্পের এত বিপুল সম্ভার বিষ্ণুপুরের মতো করে এ রাজ্যের আর কোথাও চোখে পড়ে না। টেরাকোটার মূর্তি থেকে বালুচরী শাড়ি, কাঁসার বাসন থেকে শাঁখা শিল্প, চোখ ফেরানো দায় এমন সব সৃষ্টিতে সমৃদ্ধ এই শহর। মল্ল রাজপরিবার বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার পর এখানকার নামকরণ হয় বিষ্ণুপুর। গোটা শহরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ১০০টিরও বেশি মন্দির রয়েছে। মদনমোহন, জোড় বাংলা, রাধাগোবিন্দ, পঞ্চরত্ন মন্দিরের কারুকাজ দেখার মতো। মল্লরা যেমন যুদ্ধে পারদর্শী, তেমন শিল্পের উপাসকও ছিলেন। দলমাদল কামানের পাশাপাশি রাসমঞ্চের বাহার দেখলে মল্লভূমের প্রেমে পড়তে আপনি বাধ্য। রাজধানীকে শত্রুপক্ষের হাত থেকে বাঁচাতে মল্লরাজারা বেশ কিছু গড় নির্মাণ করেছিলেন। বিষ্ণুপুর রাজবাড়ির প্রবেশ পথে গড়দরজা, চারপাশে পরিখা কাটার নিদর্শন রয়ে গিয়েছে এখনও।
বিষ্ণুপুরী তাঁত বা বালুচরী তৈরির কারখানা থেকে শাঁখারি বাজারের আনাচে-কানাচে ঢুঁ মারবেন অবশ্যই। এখানকার লণ্ঠন শিল্পের খ্যাতিও রাজ্যের গণ্ডি ছাড়িয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে গিয়েছে। বিশেষ লোকশিল্প হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে এখানকার দশাবতার তাসও। বিষ্ণুপুরের পর্যটন শিল্প নিয়ে রাজ্য সরকার-সহ বহু সংস্থাই উদ্যোগী হয়েছে এ যাবৎ। ফলে ট্যুরিস্টদের জন্য যাবতীয় সুযোগ-সুবিধে রয়েছে এখানে। এবং প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থানও হচ্ছে একে ঘিরে। টেরাকোটার গয়না, পোড়ামাটির বা শাঁখের তৈরি ঘর সাজানোর জিনিস, বালুচরী শাড়ি কিনে আনতে পারেন এখান থেকে।
বিষ্ণুপুরের আশেপাশে কিলোমিটার খানেক গেলে নিরিবিলি পাঁচমুড়া গ্রাম, টিলার মাথায় পার্বতী মন্দির, ৯০০ বছরের প্রাচীন শৈলেশ্বর মন্দির ইত্যাদি রয়েছে। হাতে আরও দিনকয়েক সময় থাকলে জয়রামবাটি-কামারপুকুর কিংবা মুকুটমণিপুরও ঘুরে আসতে পারেন বিষ্ণুপুর থেকে।
কীভাবে যাবেন:
কলকাতা থেকে প্রায় পাঁচঘণ্টার রাস্তা বিষ্ণুপুর। ট্রেনে গেলে একটু তাড়াতাড়ি হবে। হাওড়া থেকে পুরুলিয়া এক্সপ্রেস, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস-সহ প্রচুর ট্রেন রয়েছে, যেগুলো বিষ্ণুপুরের উপর দিয়ে যায়। গাড়িতে গেলে ডানকুনি থেকে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে
ধরতে হবে।
কোথায় থাকবেন:
মন্দির চত্বরের আশপাশ, কলেজ রোডে থাকার জন্য প্রচুর প্রাইভেট লজ রয়েছে। ইন্টারনেটে খোঁজ করলে ঠিকানা, ফোন নম্বর পেয়ে যাবেন। শীতকালে বিষ্ণুপুরের মেলার জন্য পর্যটকদের ভিড় বেশি হয়, তাই সেই সময় আগে থেকে বুকিং করে গেলেই ভাল।